জাবি প্রতিনিধিঃ
হেমন্তের শেষে জাবির লেকগুলোতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা।শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে অতিথি পাখি প্রতি বছর বেড়াতে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিযায়ী পাখিরা ক্যাম্পাসের লেকগুলোর সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। এ যেন লাল শাপলার মাঝে অতিথিদের মিলনমেলা!
প্রতিবছর শীতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা জাবির লেকগুলোতে আসে। সাধারণত হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে প্রচুর তুষারপাত ঘটে। ফলে শীতের এই সময়ে অতিথি পাখিরা তাদের আশ্রয়ের জন্য নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল খোঁজ করে। এদিকে বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় তারা বেড়াতে চলে আসে। প্রকৃতির নৈসর্গিক ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব পরিযায়ীদের স্বাগত জানায়। অস্তমিত সূর্যের সাথে সাথে পাখিরা যেমন নীড়ে ফিরে যায় তেমনিভাবে শীত শেষ হতে হতেই অতিথি পাখিরাও তাদের তাদের আপন ঠিকানায় চলে যায়।
প্রতি বছর এসময়ে অতিথিকে স্বাগত জানাতে লেকগুলো যেন নতুন রুপে সাজে। ফুটন্ত লাল শাপলা গুলো যেন অতিথিদের অপেক্ষায় দিন গুনছে। আর পরিযায়ীদের আগমনে যেন লাল শাপলার মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জাবির লেকগুলো।
তাদের কলতানে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস । দিনভর জলকেলি, উড়ে বেড়ানো ও খুঁনসুটিতে সময় কাঁটে তাদের। যেন জলরঙে আঁকা কোন শিল্পীর তুলির ছোঁয়া। মূহুর্তেই কিচির মিচির শব্দে তাদের একটি ঝাঁক আকাশে উড়ে যায় পরক্ষণেই আরেকটি ঝাঁক এসে ঝাপ দেয় লেকের পানিতে। লাল শাপলার ফাঁকে পাখিদের এই দুরন্তপণার দৃশ্য দেখার জুড়ি নেই।
পাখিদের দেখতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুধুমাত্র অতিথি পাখি দেখার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসেন পাখিপ্রমীরা। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা ঘুরতে আসেন। অতিথি পাখিদের সাথে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেন, পাখিদের মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধন ঘটে তাদের। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে বিমোহিত হন শিশুরা।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে অতিথি পাখির এক অকৃত্রিম সম্পর্ক গড়ে উঠে। সকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে; বিকেলের আকাশে পাখির মুক্ত উড়াউড়িতে মুদ্ধ হোন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অতিথি পাখি আসে, তার মধ্যে অধিকাংশই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারি অন্যতম। এছাড়া অন্য প্রজাতির পাখির মধ্যে আছে মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি।
জাবির লেকগুলোতে অতিথি পাখির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতিসহ বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিরও দেখা মেলে। সচরাচর যেসব পাখি দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- জলময়ূর, ডুবুরি, খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি প্রভৃতি প্রজাতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মো: আ: রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে লেকের সংখ্যা ২৯টি । এর মধ্যে ইজারা মুক্ত চারটি লেকেই প্রতি বছর অতিথি পাখিরা আসে। অতিথি পাখি সংরক্ষণে লেক পরিষ্কার করেছি, লেক ঘিরে দেওয়া হয়েছে লোহার বেষ্টনী। দর্শনার্থীদের জন্য নির্দেশিকা লাগানো হয়েছে যেন তারা পাখিদের বিরক্ত করা ও ঢিল ছোড়া থেকে বিরত থাকে।
এবছর অতিথি পাখির সংখ্যা অনেক কম। ফলে চিরাচরিত সৌন্দর্য হারাচ্ছে জাবির লেকগুলো। লেকগুলোতে বিগত বছরগুলোর মত নেই পাখির চিরচেনা কলতান। একইসাথে উপযুক্ত পরিবেশের কারণেও কমছে পাখির সংখ্যা।
আপডেট বার্তা24 এ প্রকাশিত কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Leave a Reply